Braking News

6/recent/ticker-posts

প্রাথমিকের ছুটির তালিকা সংশোধন কি অযৌক্তিক?


মো. সিদ্দিকুর রহমান
বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সারা বিশ্বে স্বাভাবিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত সময়ে কাজ করার জন্য ওভারটাইম হিসেবে সর্বত্র বাড়তি অর্থ দেয়ার বিধান বিদ্যমান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ হতে ১০ বছর বয়সের শিশুরা অধ্যয়ন করে থাকে। এদের অবুঝ মানুষ বললে ভুল হবে না। শত শত শিশুর হৈচৈ উচ্চৈঃস্বরে চিল্লাচিল্লি সহ্য করে প্রাথমিক শিক্ষকদের পাঠদান করতে হয়, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহ্য করা কঠিন। এছাড়া শিশুদের নিয়মিত নানা অভিযোগ। শাস্তিবিহীন অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করতে হয় নানাবিধ অভিযোগ।

সরকারি কর্মচারীদের ছুটির তালিকায় ২২-২৪ দিন বার্ষিক ছুটি থাকে। এছাড়া থাকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র, শনি। মোট ছুটি দাঁড়ায় প্রায় (২৪+১০৪) = ১২৮ দিন। প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় ছুটি থাকে ৭৫ দিন। সাপ্তাহিক ছুটি থাকে শুক্রবার। মোট ছুটি (৭৫+৫২) = ১২৭ দিন। বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ যেমন ১১ কমিটির সভা, খেলাধুলা, উঠান বৈঠক ও সরকারি নানা কাজে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেক ছুটি হারিয়ে যায়। প্রতিবারের মতো এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছুটির তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেন। ছুটির তালিকায় সংশোধন করা না হলে প্রতিবারের মতো এবারও ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সরকারি বিধি মোতাবেক তিন বছরের স্থলে চার বছরে পেতে যাচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদনের জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিনের ছুটি দেয়া হয়। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিনের বাড়তি ছুটি দেয়া হয় না। শিক্ষকদের বার্ষিক ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি অথবা রমজানের ছুটিকে ১৫ দিনে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে দেখানো হয়। আরবি বছর ৩৬৫ স্থলে ৩৫৫ দিন। রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি দেখানো হলে চার বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে থাকবে। গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন দেখানো হলে বা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিন অতিরিক্ত ছুটি দেয়া হলে প্রাথমিক শিক্ষকরাও তিন বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৫ সালের মতো ২০১৬ সালের মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি ছয়দিন রাখা হয়েছে। এতে থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের জন্য ছুটি হিসেবে দেখাতে বাধ্য হবেন। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাদের সময়মতো পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল কাশেম ফজলুল হকের আবেদনক্রমে ২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গ্রীষ্মের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে ১৫ দিনের রাখার নিমিত্তে অফিস আদেশ জারি করেন। অথচ ওই আদেশ ২০১৫ সাল থেকে অকার্যকর হয়ে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম এরই মধ্যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে প্রাথমিক শিক্ষকদের ননভোকেশনাল চাকরিজীবীদের মতো দুটি অর্জিত ছুটি, পিএলআরএ পূর্ণ বেতন, দুই বছর মেয়াদে অর্জিত ছুটি থাকলে ল্যাম্পগ্র্যান্ড ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানসহ ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ও ছুটির দিনে কাজ করার জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক ভাতা চেয়ে রিট আবেদন করেছে, যা বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় আছে। অপরদিকে বিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতার জন্মদিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষের দিবসকে পালন করার জন্য বিদ্যালয় খোলা রাখা প্রয়োজন। ফলে শিশুদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হবে। অথচ ছুটির তালিকায় ছুটি দেখিয়ে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদায় দিবসগুলো পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তালিকায় ছুটি থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেকটা দায়সারা গোছের যেনতেনভাবে দিবসগুলো পালন করে থাকে। সংশ্লিষ্টদের এহেন কর্মকাণ্ড অনেকটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পরিপন্থী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতকরণ, আগামী প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ভালোভাবে জানার জন্য জাতীয় দিবসগুলো ছুটির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সে ছুটিগুলো গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন রাখা কি অযৌক্তিক? প্রাথমিক শিক্ষকরা তালিকাভুক্ত ৭৫ দিন ছুটির বেশি দাবি করেন না। উচ্চ বিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ছুটি ৮৫ দিন। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রত্যাশা, অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতো সময়মতো বিধি মোতাবেক সমান সুবিধা পাওয়া। এটা নিছক দাবি নয়, এ হলো তাদের অধিকার। তাদের চাওয়া শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সময়মতো পাওয়া ও শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষকদের অধিকার। ছুটির তালিকা সংশোধনের নিমিত্তে মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আজকের দিনের ভরসা।

Post a Comment

0 Comments