Braking News

6/recent/ticker-posts

জালিয়াত শিক্ষকদের ১৪ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে


জাল সনদে চাকরি নেওয়া ও ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাতের দায়ে সারাদেশের চার শতাধিক শিক্ষককে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের আত্মসাৎ করা ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ২৬ হাজার ৩৩২ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষকরা গত জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে এই অর্থ তুলে নিয়েছেন। গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক অপকর্মের দায়ে চাকরি হারাচ্ছেন আরও প্রায় দেড়শ' শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে এমপিওভুক্ত হওয়া, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ছাত্রী ও সহকর্মী শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, যৌন নিপীড়ন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে জখম করা এবং ছাত্রীদের আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমকালকে বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, কিছু কুলাঙ্গার নানাভাবে এ পেশায় ঢুকে পড়েছে। তাদের কারণে পুরো শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে। চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, জাল সনদ দিয়ে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় ঠেকানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও এ ব্যাপারে তাগিদ রয়েছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকেও জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ নেওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দ্রুত ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি। একই সঙ্গে সারাদেশে কত শিক্ষক জাল সনদে চাকরি করছেন, তার প্রকৃত সংখ্যাও জানানোর সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন সমকালকে বলেন, কমিটির সভায় জাল সনদের বিষয়টি খুব উদ্বেগের সঙ্গে আলোচনা করেছেন সবাই। শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকেন, তারাই এসব অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত। কমিটি বলেছে, অতীতে অবৈধ বা জাল সনদে যারাই চাকরি নিয়ে থাকুন না কেন, তাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি বেতন-ভাতা হিসেবে নেওয়া সব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০৮ জন শিক্ষকের সার্টিফিকেট ও নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণ হয়েছে। এসব শিক্ষকের বেতন-ভাতা হিসেবে নেওয়া ১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টাকা সরকারি কোষাগারে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে নানাভাবে আত্মসাৎ করা আরও ২ কোটি ৯০ লাখ ১ হাজার ৫৭২ টাকা আদায় করার কথাও বলা হয়েছে। ডিআইএ জানায়, সারাদেশে আরও পাঁচ শতাধিক শিক্ষকের সনদ জাল বলে সন্দেহ করা হয়েছে। এগুলো যাচাইয়ের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কাছে পাঠানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল সনদ দিয়ে চাকরি বন্ধ করতে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে গঠন করা হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে আলাদা কমিশন। এ কমিশন না হওয়া পর্যন্ত সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ থাকবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক।

ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে গিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে তদন্ত করে এসব শিক্ষকের সনদ জাল হিসেবে চিহ্নিত করেন। এগুলো পরে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রমাণ হওয়ার পর মন্ত্রণালয়কে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সনদগুলো জাল। এসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের পাশাপাশি বেতন-বোনাস-ভাতা হিসেবে নেওয়া অর্থ আদায় করার সুপারিশ করেছেন তারা। ডিআইএর কর্মকর্তারা বলছেন, সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তদন্ত করা গেলে শিক্ষকদের সরকারি অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ গত ৫ বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জনবল কম থাকায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সময়মতো তদন্ত করা যায় না। এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের বক্তব্য, জাল সনদ ঠেকাতে সনদের কাগজ পরিবর্তন, সনদে বেশ কিছু বারকোড সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। তারপরও সনদ জালিয়াতি হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। সূত্র: কাল

Post a Comment

0 Comments