Braking News

6/recent/ticker-posts

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় স্বতন্ত্র পে স্কেলের আভাস!

একাত্তর টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকীর সাথে তরুণদের প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখছিলাম। তরুণদের সাথে নানা আলোচনার এক পর্যায়ে বিট্রেন প্রবাসী ওই তরুণ রাজনীতিবিদ যা বলছিলেন তা অনেকটা এরকম : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য প্রভৃতি সূচকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ওই অগ্রগতি ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া ওই অগ্রগতি ধরে রাখা যাবে না।
বিট্রিশ পর্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী তরুন রাজনীতিবিদ টিউলিপই শুধু নয়, যার নূন্যতম জ্ঞানবুদ্ধি আছে তিনিও বলবেন যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া একটি রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। আর যদিও বা সাময়িক কোনো কারণে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটে তবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করা না হলে ওই উন্নয়ন শেষপর্যন্ত স্থায়ী হবে না। এ কারণে উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো শিক্ষায় বিনিয়োগের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকী উন্নত বিশ্বের নাগরিক হিসেবে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। টিউলিপের বক্তৃতার সূত্র ধরেই বলা যায়, তখনই শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব হবে যখন শিক্ষকের সম্মানের সাথে মিল রেখে উপযুক্ত সম্মানী নিশ্চিত করা যাবে। কারণ একজন দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক ছাড়া আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার বিকাশ সম্ভব নয়। আর দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক পেতে হলে অবশ্যই অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানী বেশি হতে হবে। কারণ মেধাবী ও দক্ষ তরুণরা এমন কোনো পেশা বেছে নিতে চাইবে না যে পেশা তার উপযুক্ত সম্মান ও সম্মানী নিশ্চিত করবে না।

টিউলিপ সিদ্দিকী যতই বলুক না কেন এদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে কিন্তু সদ্য ঘোষিত অষ্টম পে স্কেল বলছে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো পথে চলছে। যেখানে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বান্ধব বাজেট এবং শিক্ষক বান্ধব পে স্কেল ঘোষণার কথা সেখানে বাজেটে তো শিক্ষার পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। উপরন্তু সচিব বান্ধব পে স্কেলের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ফলে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় আগামী দিনে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষক না হয়ে সচিব হতে চাইবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অদক্ষ মেধাহীনদের আস্তাবলে পরিণত হবে। আর ওই আস্তাবল থেকে আর যাই হোক দক্ষ ও মেধাবী সচিব তৈরি করা সম্ভব হবে না।

দুই.
টিউলিপ সিদ্দিকীর মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জাতিসংঘের ৬৯ তম অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের ‘অস্ত্র নয় শিক্ষায় বিনিয়োগ’ করার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পে স্কেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে সচিবদের টানাপোড়েনে সেই বক্তব্যের প্রতিফলন নেই বললেই চলে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বক্তৃতা সচিব বান্ধব বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। এমন কি তার সর্বশেষ মন্ত্রী পরিষদের সভায় পে স্কেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে উষ্মা প্রকাশের বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে। তবে উক্ত সভায় পে স্কেল নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তিনি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সাথে কোন সচিবের তুলনা চলে কি? অথবা শিক্ষকরা কেন নিজেদের সচিবদের সাথে তুলনা করতে চায়? এমন প্রতিক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে বিশ্লেষণ করলে এর মধ্যে এক ধরণের বার্তা রয়েছে এমনটি বিবেচনা করা যায়। তার ওই বক্তব্য বলছে যে, তিনি সচিব আর শিক্ষকদের সমানভাবে দেখতে চান না। পাশাপাশি আজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ‘শিক্ষকরা শিক্ষকই’ বক্তৃতা প্রদান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি শিক্ষকদের সাথে অন্য কারোর তুলনায় বিশ্বাসী নন। আর যদি সত্যিই তিনি এমনটি মনে করেন অর্থাৎ আনিসুজ্জামান স্যার অথবা অন্য কোনো শিক্ষকের সমান কোনো সচিব বা সিনিয়র সচিবের মর্যাদার তুলনা হতে পারে না তাহলে তিনি এই বিষয়টি নিশ্চয় মেনে নেবেন যে, আনিসুজ্জামান স্যারের বেতন কোনো সচিবের চেয়ে কম হওয়া যৌক্তিক হবে না। আর বেতনের সাথে মর্যাদার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেই বিষয়টি নিশ্চয় তার অজানা নয়।

তিন.
জাতিসংঘের ৬৯ তম অধিবেশনে তার ভাষণ, জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেলের ঘোষণা, আওয়ামী লীগের ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় তার সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো বিবেচনায় এনে বলা যায় যে, তার ওই বক্তৃতার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদানের ইঙ্গিত রয়েছে। আর তার মনোভাব যদি এমন হয়ে তবে তার ক্ষোভ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কখনও সুস্পষ্টভাবে তাদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদানের দাবি উত্থাপন করা হয়নি। বরং সব সময় তাদের বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে এক ধরণের গোঁজামিল পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এমনও মনে হয়েছে যে, সচিব ও সিনিয়র সচিবদের সমান পদমর্যাদা প্রদান করলেই তারা খুশি। কিন্তু প্রথম থেকে যদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা শুধুমাত্র স্বতন্ত্র পে স্কেলের দাবি উত্থাপন করতেন তাহলে আজ শিক্ষকরা সচিব বা সিনিয়র সচিবের সমান হতে চায় এই প্রশ্ন উত্থাপিত হত না। প্রধানমন্ত্রীও এই প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ পেতেন না।

পরিশেষে, শিক্ষক ফেডারেশনের নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি উত্থাপনের কোনো ইঙ্গিত আছে কিনা সেই বিষয়টি আবারও চিন্তা করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি শিক্ষকরা সচিব হতে চায় না তারা তাদের মর্যদা ফেরত পেতে চায়। আর এই মর্যাদা কেবলমাত্র স্বতন্ত্র পে স্কেলের মাধ্যমে ফেরত পাওয়া সম্ভব সেই বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেশের জনগণ ও সরকারের নিকট প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। আর তারা যদি সত্যিকার অর্থে তাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে পারেন। তবে তখন আর সচিবদের সাথে শিক্ষকদের তুলনার বিষয়টি বিবেচ্য হবে না। আর তখনই বোঝা যাবে প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থে শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার বিষয়ে সচেতন কিনা, সেই বিষয়টি। সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক হয় অর্থাৎ শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে হয়, তবে তিনি নিশ্চয় চাইবেন না তার শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জান স্যারের বেতন ও মর্যাদা কোনো সচিব বা সিনিয়র সচিবের বেতন ও পদমর্যদার চেয়ে কম হোক! তাই সাধারণ শিক্ষকদের মনোভাব উপলব্ধি করে অষ্টম পে স্কেলের বেতন বৈষম্য নিয়ে প্যাঁচাল বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেলের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপণ করবেন এমনই আমাদের প্রত্যাশা।

Post a Comment

0 Comments