
সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ ঝুলে গেছে। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এ সংক্রান্ত বিলটি কবে পাস হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিলটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিল প্রস্তুত কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অর্থমন্ত্রীকে বৈঠকে তলব করা হলেও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত হননি কেউ। অসুস্থতার জন্য কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বাস্তব চিত্র পর্যালোচনা করার কথা ছিল কমিটির। সেটিও হয়নি। সব মিলে বিলটি চূড়ান্ত করা দূরে থাক, এ সংক্রান্ত প্রাথমিক কাজও গোছানো না হওয়ায় সংসদের চলতি অধিবেশনে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেন সদস্যরা। আমলাদের প্ররোচনায় সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না- এমন অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে যত সময়ই লাগুক বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কোনোভাবেই বিলটি চূড়ান্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণই যদি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন, আর জনগণের প্রতিনিধিত্ব যদি সংসদ সদস্যরা করেন তাহলে তাদের প্রতিনিধিদের তো সবার উপরে নিতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসংক্রান্ত বিলটি অবশ্য এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। এসব বিলে তাদের বেতন-ভাতা ৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আমলারা বোঝেন কোথায় কি করতে হয়। তাই তারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরটাও বাড়িয়েছেন, নিজেদেরটাও বাড়িয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনাকালে বিষয়টি সমাধান হওয়ার আগে বিলটি চূড়ান্ত না করার পক্ষে অবস্থান নেন কমিটির সদস্যরা। তারা এটিকে টাকা নয়, সম্মানের প্রশ্ন বলে বিবেচনা করছেন।
কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু ও তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এছাড়া আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংসদে উত্থাপিত বিলটির প্রস্তাবনায় সচিবের বেতনের চেয়ে সংসদ সদস্যদের সম্মানী ভাতা প্রায় ৩০ হাজার টাকা কম রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে এমপিদের মেডিকেল বিল, যাতায়াত ভাতা, সংসদ অধিবেশন অ্যালাউন্স, কমিটি মিটিংয়ে অংশ নিলে যে অ্যালাউন্স সেটাও বাড়ানো হয়নি। সংসদে উত্থাপনের পর বিলটি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হলে কমিটি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিলটি চূড়ান্ত করেনি।
২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বিলটির বিপক্ষে মত দেন। তারা বিলের প্রস্তাবনায় সরকারি সর্বোচ্চ পদ সচিবের বেতনের চেয়ে সংসদ সদস্যদের সম্মানী ভাতা কম রাখায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সচিবরা ৮২ হাজার টাকা বেতন পেলেও প্রস্তাবিত আইনে এমপিদের জন্য ৫৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা রাখা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এমপিরা শুধু আমলা কেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের চেয়েও বেশি বেতন পাওয়ার দাবি রাখেন। যা করা হয়েছে সেটি খুবই সম্মান হানিকর। প্রয়োজনে সম্মানী ভাতা ১ টাকা করা হোক, কিন্তু সম্মানটা যথাযথ দেয়া হোক।
কমিটির ওই বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে মঈন উদ্দিন খান বাদল এবং ইমরান আহমেদও বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তারা বলেন, আমলারা ৮২-তেই থামেননি। সিনিয়র সচিবদের বেতন ৮৬ পর্যন্ত করেছেন। ওইসব আমলার অজুহাত হচ্ছে, এমপিরা তো বেতন নেন না, সম্মানী ভাতা নেন। এটি কম হলেও সমস্যা নেই। তারা বলেন, সম্মানী ভাতা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও নেন। অন্যসব মন্ত্রীও নেন। তাহলে তাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো হল কেন? আমলাদের নিচে তো সংসদ সদস্যরা থাকতে পারেন না। এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি বিল প্রস্তুত কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অর্থমন্ত্রীকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছিল।
0 Comments