
নতুন পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রশাসন বহির্ভূত আলোচ্য ক্যাডারগুলোয় প্রথম শ্রেণির পদ সৃষ্টি করা হবে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের প্রবেশ পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার (প্রথম শ্রেণি) সবার অষ্টম গ্রেডের বেতন সুবিধাদি নিশ্চিত করার কথাও বিবেচনায় আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদোন্নতির বিধিমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে সংশোধনীও আনা হতে পারে। এ লক্ষ্যে ২৬ ক্যাডারে পদোন্নতির সোপান তৈরির প্রক্রিয়াও ঠিক করা হয়েছে।
জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে সরকার গঠিত সচিব কমিটির প্রধান আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয় নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে বেতন বৈষম্য ও পদমর্যাদায় সমতা আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কলেজ অধ্যাপকদের বিদ্যমান পদ চতুর্থ গ্রেডের। এ পদে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা ৮৫৮ জন। এর মধ্য থেকে চাকরিকাল দুই বছরের ভিত্তিতে তৃতীয় গ্রেডে ৪০০টি পদ উন্নীত করা হচ্ছে। একইভাবে ২য় গ্রেডে ১০টি পদ সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ডিজি ছাড়াও আরও দুটি গ্রেড-১ পদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি গ্রেড-২ পদ, সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদকে গ্রেড-২ করা হতে পারে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারে বিদ্যমান অষ্টম গ্রেড থেকে ২য় গ্রেড পর্যন্ত সকল গ্রেডে পদের সংখ্যা বাড়িয়ে পদোন্নতির সোপান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আনসার ক্যাডারের ৩য় থেকে ৯ম গ্রেড পর্যন্ত নতুন করে অর্ধশতাধিক পদ তৈরি করা হবে। এ ক্যাডারে অতিরিক্ত মহাপরিচালক, উপ-মহাপরিচালক, উপ-পরিচালকের পদ বাড়ানো হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম গ্রেডের পদ বিলুপ্ত করে সহকারী পরিচালকের (প্রবেশ পদে) ৫০টি পদ বাড়ানো হতে পারে। এতে ওপরের দিকে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হবে। এ ছাড়া পরিচালকের বিদ্যমান ২২টি পদ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ২৫টি করা হবে। কৃষি ক্যাডার ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ক্যাডারেও পর্যায়ক্রমিক গ্রেড বৃদ্ধি করা হবে যাতে নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে পদোন্নতি দেয়া যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য ও পদোন্নতি জটিলতা দূরীকরণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এই প্রস্তাবনাকে ভিত্তি ধরেই কাজ করছে সচিব কমিটি। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী যেসব গ্রেডে ১০০ সদস্য আছেন সেসব ক্যাডারে কমপক্ষে ১টি প্রথম ও ১টি দ্বিতীয় গ্রেড নতুন সৃষ্টি করা হবে। কারিগরি, সমবায়, ইকোনমিক, পরিসংখ্যান ও টেলিকমে মোট ৬টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। অর্থাৎ প্রশাসন বহির্ভূত আলোচ্য ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির নতুন পদ হবে ৩৮টি। একইভাবে আনসার, সড়ক ও জনপথ, সাধারণ শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, ডাক, গণপূর্ত, খাদ্য ও বন ক্যাডারে একটি করে ২য় গ্রেডের মোট ১০টি পদ সৃষ্টি করা হবে। ফলে এ গ্রেডে মোট পদ সংখ্যা হবে ১০১টি। তবে বাণিজ্য (ট্রেড) ক্যাডারে কোনও ২য় গ্রেডের পদ থাকবে না।
এ ছাড়া সমবায় এবং পরিসংখ্যান ক্যাডারে ১টি করে তৃতীয় গ্রেডের মোট ২টি পদ সৃষ্টি করা হবে। এর ফলে ৩ শতাংশ কর্মচারী ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। এতে প্রশাসন ক্যাডারে ৫ম গ্রেড থেকে ৪৫টি পদ ৪র্থ গ্রেডে আসবে। কৃষিতে ৩৬টি ৪র্থ গ্রেডের ক্যাডার পদ বহাল রয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় ৪র্থ গ্রেডের পদ হবে ৩০টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগে থাকছে ৪০টি ৪র্থ গ্রেডের পদ। মৎস্য ক্যাডারে ২৫টি ৪র্থ গ্রেডের পদ থাকবে। ৪র্থ গ্রেডে বর্তমান পদ সংখ্যা হবে ২ হাজার ২৫১টি। এখন আছে ২ হাজার ৪২৭টি।
এছাড়া ৮ম গ্রেডে ৩ বছর, ৭ম গ্রেডে ৪ বছর, ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৫ বছর, ৫ম গ্রেডে ১০ বছর, ৪র্থ গ্রেডে ১২ বছর, ৩য় গ্রেডে ১৪ বছর, ২য় গ্রেডে ১৭ বছর এবং ১ম গ্রেডে ২০ বছর সন্তোষজনক চাকরিকাল পূর্ণ করলে এবং পদশূন্য থাকলে পরবর্তী উচ্চতর স্কেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপনীত হবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন বহির্ভূত আলোচ্য ক্যাডারগুলোয় প্রথম শ্রেণির পদ হবে ৩৮টি। একইভাবে আনসার, সড়ক ও জনপথ, সাধারণ শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, ডাক, গণপূর্ত, খাদ্য ও বন ক্যাডারে একটি করে ২য় গ্রেডের মোট ১০টি পদ সৃষ্টি হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাতো নিরসন করতেই হবে। আর সেই সমস্যা যতো তাড়াতাড়ি নিরসন করা যায় ততোই মঙ্গল। অর্থমন্ত্রী জানান, সচিব কমিটিকে একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওরা বসে বাকিটা চূড়ান্ত করে আমার কাছে দিলে তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে চূড়ান্ত করবো। তিনি জানান, আশা করছি আর কোনও সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রবেশ পদে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার (প্রথম শ্রেণি) সবার জন্যই অষ্টম গ্রেডের বেতন সুবিধাদি নিশ্চিত করা হতে পারে। এর ফলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বেতনক্রম নিয়ে বিদ্যমান অসন্তোষ দূর হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বেতন বৈষম্য দূরীকরণে গঠিত সচিব কমিটির প্রধান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বৈষম্য বা বেতনক্রম ও পদমর্যাদার বিষয়গুলো সমাধানে কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। তিনি বলেন, সকল পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবনাকে ভিত্তি ধরে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সরকারকে তাদের দাবি মানতে ৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সিনিয়রিটি দিতে অন্তত পাঁচ বছর অধ্যাপকের পদে সন্তোষজনক চাকরি করলে তাদের মধ্য থেকে ৮ জনকে সিনিয়র সচিবের সমান বেতনক্রম দেওয়ার কথা ভাবছে। অন্যান্য পদেও পর্যায়ক্রমিক পদোন্নতির স্বার্থে ঊর্ধ্বতন গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২৬ ক্যাডারের মধ্যে আটটি ক্যাডার থেকে প্রস্তাবনা পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে কোনও প্রস্তাব সচিব কমিটি এখনও পায়নি। ফলে তাদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
0 Comments