
নতুন বছর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৭টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সাত শতাধিক শিক্ষকের বেতন বাড়ানো হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৭ হাজার শিক্ষার্থীরও দিতে হবে দ্বিগুণ বেতন-ফি। কোনো কোনো শ্রেণীতে বেতন-ফি বৃদ্ধির হার ১১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বেতন বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে হতবাক ও ক্ষুব্ধ শিক্ষাবিদ, নাগরিক এবং অভিভাবকরা। তাদের মতে, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা চসিকের বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে। বেতন বাড়ালে এসব পরিবারের আর্থিক সংকট আরও বাড়বে। কেউ কেউ বলছেন, নতুন কাঠামোয় শিক্ষকদের বেতন সরকার পরিশোধ করবে। তাই সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ফলে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বাড়বে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, 'বর্ধিত বেতন-ফি জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হবে। তবে যে শ্রেণীতে খুব বেশি বেতন বেড়েছে, তা কমিয়ে আনার জন্য সুপারিশ করা হবে।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, 'চলতি বছরের জুন থেকে চসিক পরিচালিত ১৯টি কলেজে বর্ধিত ফি কার্যকর হয়েছে। জানুয়ারি থেকে বর্ধিত ফি কার্যকর হবে ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সাতটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে।'
গত ৬ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশনের পঞ্চম সাধারণ সভায় ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন-ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মাসিক বেতন ৮০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। অষ্টম শ্রেণীতে শতভাগ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬০ টাকা। নবম ও দশম শ্রেণীতে ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফিও। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ফি ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৪০ টাকা করা হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতেও ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণীতেও বাড়ানো হয়েছে ৯৪০ টাকা। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম ও দশম শ্রেণীতে ভর্তি ফি ২৭৪০ টাকা।
সিটি করপোরেশনের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি নাজমুল হক ডিউক বলেন, 'জানুয়ারি থেকে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে শিক্ষা খাতে সিটি করপোরেশনের ভর্তুকিও দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ভর্তুকি সামঞ্জস্য রাখতে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বাড়ানো হয়েছে।'
চসিকের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ছেলে পড়েন পাথরঘাটা সিটি করপোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, 'শহরের বিভিন্ন নামকরা স্কুলে বেতন-ফি বেশি বলেই ছেলেকে সিটি করপোরেশনের স্কুলে ভর্তি করেছি। এখানেও বেতন-ফি বাড়ানো হলে ছেলেকে পড়ালেখা করানো কঠিন হয়ে যাবে।'
এ প্রসঙ্গে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, 'নতুন কাঠামোয় শিক্ষকদের বেতন সরকার পরিশোধ করবে। সিটি করপোরেশন কোন যুক্তিতে বেতন-ফি দ্বিগুণ করছে তা পরিষ্কার করা দরকার। নগরের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন তার লক্ষ্য থেকে সরে গেলে স্কুল পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার বাড়বে।' প্রসঙ্গত, চসিক পরিচালিত প্রায় ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১২শ'। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে কর্মরত আছেন প্রায় ৭০০ শিক্ষক। সূত্র: দৈনিক সমকাল
0 Comments