ইউরোপে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে। স্পেনের এক নারীর শরীরে জিকা ভাইরাসের নমুনা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ৪১ বছর বয়সী ওই নারী স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা।
গর্ভবতী ওই নারী কয়েকদিন আগে কলম্বিয়া থেকে ফিরেছেন। তিনি সেখানেই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ধারণা করা হচ্ছে। খবর- বিবিসি ও এএফপির
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পর স্পেনেই প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হলো। এরআগে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) জানায়, ভারতসহ যে কোনো উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া যেসব লোক সম্প্রতি জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ বা অঞ্চলসমূহ ভ্রমণ করেছেন তাদের কাছ থেকে রক্ত না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউটিও।
ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের পর তা উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ২২টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরইমধ্যে বিশ্বেবর ২৬টি দেশে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
জিকা ভাইরাসের জন্য দায়ী এডিস মশা। এতে আক্রান্ত হয় মায়ের গর্ভে থাকা শিশু। তবে এখনো ছোট মাথা নিয়ে শিশুদের জন্ম নেওয়ার সঙ্গে জিকা ভাইরাসের প্রামাণ্য কোনে যোগসূত্র দেখাতে পারেননি গবেষকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ ভাইরাসের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদেরও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ব্রাজিল ও এল সালভাদরে বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে সংস্থাটি জানায়, গিলিয়ান-বার সিনড্রোম (জিবিএস) নামে আরেকটি বিরল রোগেরও কারণ হতে পারে এই ভাইরাস।
গত বছরের মে মাসে প্রথম ব্রাজিলে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ে। এর পর এ পর্যন্ত অন্তত চার হাজার শিশু জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় ভাইরাসটির সংক্রমণ এত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, ব্রাজিলসহ চারটি দেশে নারীদের আপাতত গর্ভধারণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মূলত মশার মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়লেও যৌনসঙ্গমে জিকা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। লাতিন আমেরিকা ফেরত সঙ্গীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করার পর জিকা ভাইরাসে টেক্সাসের এক নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের এটিই প্রথম ঘটনা নয়, ২০১৩ সালে এধরণের আরেকটি সংক্রমণ ঘটেছিল।
জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪০ সালে উগান্ডা ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করা বানরের মধ্যে। ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় মানুষের মধ্যেও শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। এর পর ২০০৭ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাত্র ১৪টি সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ে।
জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে রক্তদান ও যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও ছড়ায়। দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভাইরাসটির ওষুধ না থাকায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মশা থেকে দূরে থাকার ওপর। সংক্রমিত ব্যক্তি হালকা জ্বরে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া র্যাশ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, হাড়ের জোড়ায় ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং মাথাব্যথাও হতে পারে। হজমে সমস্যা হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
জিকা ভাইরাসের উপসর্গগুলো ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতোই। রক্ত প্রস্রাব ও লালা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে। জিকা ভাইরাসের এখনও কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি, ওষুধ বা টিকা নেই। উপর্যুক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। পানিশূন্যতা রোধে পানি পান করতে হবে। জ্বর সারাতে ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। লম্বা হাতার জামা পরতে হবে, যাতে মশা বসার মতো শরীরের খুব বেশি অংশ খোলা না পায়। মশার ওষুধও ব্যবহার করা যায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে থাকতে হবে আরও বেশি সতর্ক। ঘুমানোর সময় দিনে কি রাতে, ব্যবহার করতে হবে মশারি। বাড়ির পাশের জলাবদ্ধতা, ফুলের টব ইত্যাদিতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
0 Comments