Braking News

6/recent/ticker-posts

অ্যাকশনে সরকার.....



বর্ধিত বেতন ও ফি এবং এসএসসির ফরমে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত না দেয়ায় কঠোর অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের তদন্তে দেখা গেছে, কেবল ঢাকা বোর্ডেই ৮৫৫টি প্রতিষ্ঠান এসএসসি ফরম পূরণে তিন থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা আদায় করেছে। দিনাজপুর বোর্ডের ২৯টি প্রতিষ্ঠানও ফেরত দেয়নি এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা, নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বর্ধিত বেতন ও ভর্তি ফি ফেরত দেয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারী প্রায় সাড়ে আটশ' প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের ফেরত দিয়েছে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়েছেন।
মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিলেও এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদ বলেন, 'অনেক প্রতিষ্ঠানই আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন তারা শিক্ষার্থীদের অর্থ ফেরত দিয়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন- তারা নির্দেশনা দেরিতে পেয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানের কথার ওপরই আমরা নির্ভর করছি না। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই হচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফেরার পরই (সিঙ্গাপুরে আছেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ফিরবেন) এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন।'

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, 'যারা বাড়তি অর্থ ফেরত দেয়নি তাদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।' যেসব প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানেনি তাদের এমপিও স্থগিত এবং পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে শিক্ষামন্ত্রীর বেঁধে দেয়া সাত দিন (কর্মদিবস) সময় গতকাল শেষ হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি ফরম পূরণের সময় আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ, নতুন বছরে আদায় করা বর্ধিত ফি ও ভর্তি ফি সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফেরত দেয়ার সময় বেঁধে দেন। তবে রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বর্ধিত বেতন ও ভর্তি ফি আংশিক সমন্বয় এবং সব শ্রেণীর বর্ধিত বেতন ও ফি সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে উইলস লিটন জুয়েলর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তদন্তে রাজধানীর সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত দেয়নি, এমনকি সমন্বয়েরও ঘোষণা দেয়নি।

এ বিষয়ে শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, 'মতিঝিল মাইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বছর ভর্তি ফি বাড়ায়নি। ভিকারুন নিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে তারা কেবল প্রথম শ্রেণীর বেতন বাড়িয়েছেন। তবে আমরা তাদের কথার ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখছি না। তাদের তথ্যের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।'

বর্ধিত বেতন ও ভর্তি ফি ফেরত দেয়নি রাজধানীর পাঁচ প্রতিষ্ঠান
নতুন বছরের শুরুতে রাজধানীর বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছেমতো ভর্তি আদায় ও টিউশন ফি বাড়ানো হয়। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন, ফি'সহ সব শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়। চলে তীব্র আন্দোলন। এরপর তদন্তে নামে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা অধিদফতরের তদন্তে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল, মোহম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মিরপুর পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে মাউশির তদন্তে।

এই সাত প্রতিষ্ঠান অষ্টম বেতন কাঠামোর অনুসারে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির অজুহাত তুলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, বেতন ৪০ শতাংশ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে মাউশি।

এছাড়াও বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি আদায় ও বেতন বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে।

ঢাকা বোর্ডের ৮৫৫টি প্রতিষ্ঠানে ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ৮৬০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, যারা এসএসসির ফরম পূরণের নামে তিন হাজার থেকে প্রায় ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি আদায় করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীর এবং বাকি ৮৫৫টি প্রতিষ্ঠানই ঢাকা বোর্ডের। বাকি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেবল রাজধানী ও ঢাকা জেলারই ২৭২টি প্রতিষ্ঠান এসএসসি ফরম পূরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ফি আদায় করেছে। সবচেয়ে বেশি ফি ১৪ হাজার টাকা আদায় করেছে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'অতিরিক্ত আদায়কৃত ফি ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন, কোচিং ফি, স্কুলের উন্নয়ন ফি ইত্যাদির কথা বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও অকৃতকার্য (টেস্ট পরীক্ষায়) ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।'

সরকারি স্কুলেও বাড়তি ফি
এসএসসি ফরম পূরণে শিক্ষাবোর্ড বিজ্ঞানে এক হাজার ৪৫৫ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্যে এক হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশকিছু সরকারি স্কুলেও ইচ্ছেমতো ফি আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তিন হাজার ২৪০ টাকা, পুরান ঢাকার ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তিন হাজার ৫৫৯ টাকা, নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তিন হাজার ৯০ টাকা, কমলাপুর রেলওয়ে উচ্চবিদ্যাল সাড়ে তিন হাজার টাকা, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুলে তিন হাজার টাকা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন হাজার ৫৫ টাকা আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর এলিয়াছ হোসেন বলেন, 'সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

দিনাজপুর বোর্ডের ২৯ প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়নি
লালমনিরহাটের ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি ২৯টি প্রতিষ্ঠান। ১১টি প্রতিষ্ঠান বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত ফি ফেরত দিয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান এ নির্দেশ দেন।

শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনা জারির এক সপ্তাহ চলে গেলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গতকাল পর্যন্ত বর্ধিত ফি ফেরত দেয়নি।

লালমনিরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ১১টি বিদ্যালয় বর্ধিত ফি ফেরত দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও টাকা ফেরত দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Post a Comment

0 Comments