কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নামকাওয়াস্তে গড়া ও অস্তিত্বহীন কিছু বেসরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করা
হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের নতুন বিদ্যালয়-সংক্রান্ত বিধিমালা উপেক্ষা করে ফুলবাড়ী
উপজেলায় গত জুন মাসে তাড়াহুড়ো করে একটি করে টিনশেডের ঘর তুলে জনৈক
কর্মকর্তাকে ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে ৯ আগস্ট ২০১৬ স্মারক নং ৮২৯/২ বলে ১১টি
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ওই ১১টি বাদে আরও ৬টি বেসরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় সুপারিশের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।
উপজেলার আয়তন ও শিশুশুমারির সংখ্যানুযায়ী ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। তার পরও ১১টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের
প্রস্তাবনা খুবই রহস্যজনক। যে ১১টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করা
হয়েছে, সেগুলো হলো সুজানেরকুঠি আদর্শ বিদ্যালয়, সর্দারপাড়া পশ্চিম
খোচাবাড়ী আবাসন বিদ্যালয়, চর সোনাইকাজী বিদ্যালয়, মধ্যতালুক শিমুলবাড়ী
স্বল্পব্যয়ী বিদ্যালয়, পূর্ব জকারহাট পশ্চিম নওদাবস বিদ্যালয়, বারাইতারী
কুরুষাফেরুষা স্বল্পব্যয়ী বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরগোরকম-ল বিদ্যালয়, বড়লই
সর্দারপাড়া বিদ্যালয়, উত্তর নজর মামুদ বিদ্যালয়, খোচাবাড়ী বিদ্যালয়, পশ্চিম
ঝাউকুটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে শুধু একটি টিনশেডের খোলাঘর, চেয়ারÑটেবিলবিহীন অবস্থায় উত্তর
নজরমামুদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুজানের কুঠি আদর্শ বিদ্যালয় ও
সর্দারপাড়া পশ্চিম খোচাবাড়ী আবাসন বিদ্যালয়কে পাওয়া গেছে। শুরু থেকে
বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। সর্দারপাড়া পশ্চিম খোচাবাড়ী আবাসন বেসরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোকন মিয়া বলেন, ‘যেহেতু আমাদের বেতন-ভাতা
নেই, তাই বিদ্যালয় তেমন খোলা রাখি না। বড়লই সরদার পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুয়েল জানান, জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের বই দিয়ে পাঠদান
শুরু হবে। পূর্ব জকারহাট পশ্চিম নওদাবস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম
উপজেলা শিক্ষা অফিসে থাকলেও সরেজমিনে কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছামাদ বলেন, ‘এ নামে কোনো বিদ্যালয় এখানে আছে
বলে আমার জানা নেই। সুজানের কুঠি আদর্শ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি
বেড়াবিহীন টিনশেডের ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে। খোচাবাড়ী বেসরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, বিদ্যালয়টি যেখানে তোলা
হয়েছে, সেটি খোচাবাড়ী মোস্তাকিয়া দাখিল মাদ্রাসার জমি। ওই বিদ্যালয়ের নামে
কোনো জমি নেই। কীভাবে এটা হয়েছে আমরা জানি না।’
উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, ‘কিছু অনিয়ম ও দুই নম্বরি
থাকলেও এ উপজেলায় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে’, এটি মানবিক
ব্যাপার, তাই এ বিষয়ে লেখালেখি না করাই ভালো।
0 Comments